স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের বেশিরভাগ সুপারিশকে সাধুবাদ জানালেও বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এর আগেও সংসদ সদস্যদের বাধায় তৃণমূলের সরকার শক্তিশালী করা যায়নি। তাই সংস্কারের পর স্থানীয় সরকারে ভোটাভুটির পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। যদিও চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোট না থাকা এবং একসাথে পাঁচ পরিষদে ভোট আয়োজন নিয়ে কারও কারও দ্বিমত রয়েছে।
সাধারণত তৃণমুল সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে ভোটের উত্তেজনা বেশি থাকে। তবে সব স্থানীয় সরকারের কর্মপরিধির সীমাবদ্ধতা নিয়ে রয়েছে অভিযোগ। ফলে বিভিন্ন মহল থেকে স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করার তাগিদ দেয়া হলেও তা কাজে আসেনি। ২০০৭ সালে এমন উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে তা আর কাজে আসেনি।
কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিক হাসান বলেন, এমপিদের কারণেই স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হতে পারেনি। কারণ তারা চান না, স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী হোক। এছাড়া কমিশনে অনেকগুলো ভালো প্রস্তাব থাকলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ভোট হবে কেবল মেম্বার বা কাউন্সিলর পদে। নির্বাচিতদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্ধারিত হবেন। তবে এতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কালো টাকার দৌরাত্ম আরও বাড়বে বলে মনে করেন ড. সাদিক হাসান।
তিনি বলেন, যখন অনেকজন মেম্বারের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান বা মেয়র হবেন তখন প্রার্থী বা ইলেক্টেড মেম্বার কেনাবেচার একটা বিষয় ঘটতে পারে। তাছাড়া সাধারণ মানুষ যারা শুধু মেম্বার হতে চান তাদের সুযোগ কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এমন সিস্টেম অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাবেক যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলি বলেন, যদি কয়েকজন মেম্বার একজোট হয়ে কোনও মেয়র বা চেয়ারম্যানকে কে সড়িয়ে দিতে চায় তাহলে সেটা তারা পারবে। এক্ষেত্রে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীরাও পরিষদের অস্থায়ী মেম্বার হতে পারবে বলে দেয়া সুপারিশকে সম্ভাব্য ‘ডিজাস্টার’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌরসভা ও সিটির আলাদা আলাদা আইনের বিপক্ষে সংস্কার কমিশন। নির্দিষ্ট আইনের অধীনে একসাঙ্গে নির্বাচনের সুপারিশ করেছেন তারা। এতে খরচ দুই-তৃতীয়াংশ কমবে বলে মনে করে কমিশন।
এ বিষয়ে ড. সাদিক হাসান বলেন, এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন, কেউ যদি এই আইনের বিরুদ্ধে রিট করে আর সেটা যদি অকার্যকর ঘোষণা করা হয় তাহলে পাঁচটি লেভেলই অকার্যকর হয়ে পড়বে। এছাড়া কমিশনের পাঁচ ধাপে নির্বাচন করার সামর্থ্য আছে কি না সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তবে জেসমিন টুলি বলেন, এটা অসম্ভব কিছু নয়। তবে এক্ষেত্রে কমিশনের অধীনে যারা কাজ করবেন তাদেরকে ট্রেনিং করাতে হবে। সক্ষমতা বৃদ্ধি করিয়ে নিতে হবে। এছাড়া ছোট ছোট প্রতিটি এলাকা ও ইউনিটে যদি আর্থিক স্বাধীনতা ও বরাদ্দ থাকে তাহলে সেগুলোর উন্নয়ন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ভোটের আগেই সুপারিশ বাস্তবায়নের পক্ষে। এতে একমত বিশ্লেষকরাও।
তবে দিনশেষে আইন প্রনয়ন ও পরিবর্তন যেহেতু সংসদের বিষয় তাই এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সংসদ সদস্যদের সদিচ্ছার ওপর। এছাড়া তৃণমূলের সেবা বৃদ্ধির স্থায়ী রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি আদায়ের ওপর জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।